বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব আসার পর আজ ১২ বছর আমি একটি ঘরে বন্দি। এখানে আমাকে প্রতিদিন ৬ পুরুষের বিছানায় যেতে হয়। ওরা আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে।
বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে আমার লাশটা দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন।’বাবাকে মোবাইলে সৌদি আরব থেকে কথাগুলো বলছিলেন সেখানে বিক্রি হয়ে যাওয়া কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের তাসলিমা আক্তার (৩৫)।
তাসলিমা আক্তার ওই উপজেলার মক্রমপুর গ্রামের সামসুল হকের কন্যা। পার্শ্ববর্তী লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং গ্রামের আলম হোসাইন আলম ২০০৭ সালে তাকে সৌদি আরব নিয়ে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ তাসলিমার স্বজনদের। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সামছুল হক বাদী হয়ে আলমসহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করে নাঙ্গলকোট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রতারক আলম তাসলিমার ১২ বছরের বেতন বাবদ ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টাকাও আত্মসাৎ করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আলম হোসাইন ২০০৭ সালে নাঙ্গলকোট উপজেলার মক্রমপুর উত্তরপাড়ার সামছুল হকের মেয়ে তাসলিমা আক্তার (৩৫), একই উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের সুরুজ খাঁনের ভাগিনা সবুজ খাঁন (৩২) ও ভবানীপুর গ্রামের আলী মিয়ার মেয়ে আমেনা আক্তারকে (৩০) সৌদি আরবে কাজে পাঠানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নেয়। তবে তাসলিমা ছাড়া বাকি দু’জনকে সৌদি আরব নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি আলম।
পরবর্তীতে ওই বছরের ৮ জুন তাসলিমাকে সৌদি আরব নিয়ে কয়েক দিন তার বাসায় রেখে তাসলিমার যাবতীয় কাগজপত্র রেখে সৌদি এক নাগরিকের কাছে বিক্রি করে দেয়।
এরপর থেকে সৌদির ওই ব্যক্তি তাসলিমাকে একটি ঘরে আবদ্ধ রেখে নিয়মিত ৬ ব্যক্তির কৃতদাসের মত ব্যবহার করতে থাকে। ওই ছয় ব্যক্তি তাকে নিয়মিত দাসীর ন্যায় শারীরিক ও মানুষিক ভাবে নির্যাতন চালায়।
তাকে শুধু সামান্য কয়টা খাবার খেয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। বন্ধ হয়ে যায় যাবতীয় যোগাযোগ। দেয়া হয় না তাকে কোনো বেতন। প্রতারক আলম যে সৌদি ব্যক্তির ভিসার মাধ্যমে তাকে কাজের মেয়ে হিসাবে নেয়, তার কাছ থেকে প্রতি মাসে ২২ হাজার (২ হাজার রিয়াল) টাকা নিজ ব্যাংক হিসাবে জমা করে।
এদিকে দীর্ঘ ১২ বছর যাবত ওই নারীকে নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে ভিসা প্রদানকারী সৌদি ব্যক্তি প্রতারক আলমের বিরুদ্ধে সৌদি আইন অনুসারে মানব পাচার ও বেতনের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মামলা করেন। মামলার পর আলম সৌদি আরব থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আত্মগোপনে থাকেন।
এদিকে গেলো সপ্তাহে সৌদি আরব থেকে তাসলিমা অজ্ঞাত এক মোবাইল নাম্বার থেকে তার বাবার কাছে ফোন করে তাকে পাচার ও বিক্রি করে দেয়ার বিষয়টি জানান।
সেই সাথে জীবিত অথবা মৃত- যেভাবেই হোক তাকে যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে সে অনুরোধ জানান। কিন্তু সৌদিতে বর্তমানে তার অবস্থান কোথায়- সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি তাসলিমা। আর অজ্ঞাত স্থানে থাকার কারণে তার পরিবারের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে তাসলিমার বাবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘ বার বছর পর কয়েকদিন আগে আমার মেয়ের সাথে কথা হয়। সে সৌদিতে অনেক কষ্টে আছে। তাকে আমি ফেরত চাই।আত্মগোপনে থাকা আলমের বড় ভাই ইদ্রিছ মিয়া বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের বিষয়টি আমি জানি না। তবে সে এমন কাজ করবে বলে আমার মনে হয় না।
নাঙ্গলকোট থানার ওসি (তদন্ত) আশ্রাফ উদ্দিন বলেন, থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মেয়েটিকে উদ্ধার এবং মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।